Please fill out the form below and we will get back to you as soon as possible.
ঝালকাঠি, ২৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জেলার ১০০ শয্যার ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তিনটি সরকারি এ্যাম্বুলেন্স টানা দুইমাস ধরে গ্যারেজে পড়ে আছে। নতুন চালক যোগদান করেই ছুটি না নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ায় এ অচলাবস্থা। এতে জরুরি রোগী পরিবহনসেবা বন্ধ হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, গত ২০২৫ এর ১ জুলাই ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক জামাল হোসেন ও সিভিল সার্জনের চালক আবু বকর ভোলায় বদলি হন। চালকদের ‘অটো রিলিজ’ আদেশ কার্যকর হলেও বিকল্প চালক নিযুক্ত না করায় পুরো জেলায় সরকারি এ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ হয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বদলির ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট প্রভাব’ ও প্রশাসনিক গাফিলতি ছিল। আগের চালকরা তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে বদলি হয়েই চলে গেছেন, যার প্রভাব এখনও পড়ছে।
হাসপাতালের আরএমও ডা. মেহেদী হাসান সানি বলেন, চালক বদলি হওয়ার কিছুদিন পর নুরুল আবছার নামের একজন চালককে ঝালকাঠিতে পদায়ন করা হয়। গত ২৮ জুলাই যোগদান করেই যোগদানের দিনই ছুটির দরখাস্ত দিয়ে তিনি চলে যান। ১ আগস্ট থেকে কাজে ফেরার কথা থাকলেও তিনি এখনো ফেরেননি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
হাসপাতালটিতে নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, “তাকে শোকজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে যতদিন অনুপস্থিত ছিলেন, ততদিনের বেতন কর্তন করাসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকেও তার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হবে। এবং আরও একজন চালক চাওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, “হাসপাতালটিতে নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক যদি এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমি নিজে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। স্বাস্থ্য বিভাগে কোন ধরনের গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।”
এদিকে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগীদের গুনতে হচ্ছে তিনগুণ ভাড়া। ঝালকাঠি থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ৪০০ টাকা হলেও এখন বেসরকারি এ্যাম্বুলেন্স দিতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
সদর উপজেলার আগড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, আমার চাচাতো ভাইকে গত সপ্তাহে বরিশাল নিতে হয়েছিল। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় এক হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স নিতে হয়েছে। সরকার যদি সেবা দিত, তাহলে এত কষ্ট হতো না।
রানাপাশা গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, ‘আম্মা অসুস্থ হওয়ায় সদর হাসপাতালে নিলাম। ডাক্তার বরিশালে স্থানান্তর করেন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স না থাকায় ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে প্রাইভেট গাড়িতে নিতে হয়েছে।’
শহরের লঞ্চঘাট এলাকার নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার শশুরকে ঝালকাঠি হাসপাতাল থেকে বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সের এক হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। অথচ সরকারি গাড়িতে খরচ হতো ৪০০ টাকা।’
সদর উপজেলার কৃষ্ণকাঠি এলাকার মো. মনির হোসেন বলেন, ‘চালক আসার খবরে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। ১ আগস্ট থেকে এ্যাম্বুলেন্স চালু হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা চালু হয়নি, যা খুবই হতাশাজনক। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই তাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না।’
সরকারি কর্মচারী বিনা ছুটিতে তিন দিনের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা, ২০১৯ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এর মধ্যে বেতন কর্তন, ছুটি বাতিল, কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ), পদাবনতি, সাময়িক বরখাস্ত বা চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো শাস্তি অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নুরুল আবছার এক মাস ধরে বিনা ছুটিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে এসব বিধিমালা অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ঝালকাঠির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেনগুপ্ত বলেন,“একজন চালকের অনুপস্থিতিতে যদি জেলার স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ে, তবে এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রমাণ। শুধু চালক নয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সুত্রঃ https://www.bssnews.net/bangla/health/229279
No Data Found!
21 Sep, 2025
20 Sep, 2025
20 Sep, 2025