Please fill out the form below and we will get back to you as soon as possible.
নগর জীবনের অচল চিত্র:
ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে ছুটে বেড়ায়। অথচ সামান্য এক ঘণ্টার বৃষ্টিই পুরো শহরকে অচল করে দেয়। অফিস ফেরত মানুষ আটকে যায় রাস্তায়, শিক্ষার্থীরা পৌঁছাতে পারে না স্কুলে, দোকানদাররা হারায় দিনের ব্যবসা। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ যে সমস্যাটি দেখা দেয় তা হলো জরুরি চিকিৎসা সেবা। একটি অ্যাম্বুলেন্স যখন বৃষ্টির পানিতে আটকে যায়, তখন রোগীর প্রতিটি মিনিট হয়ে ওঠে মৃত্যুঝুঁকির সমান।
১. অল্প বৃষ্টিতেই শহর ডোবার কারণ
কেন সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ বা গাজীপুরের মতো শহরগুলো পানিবন্দি হয়ে যায়?
অপরিকল্পিত নগরায়ণ: খাল, নালা ও জলাধার ভরাট করে উঁচু দালান তোলা।
ড্রেনেজ সিস্টেম ভেঙে পড়া: অধিকাংশ ড্রেন আবর্জনায় ভরা।
রাস্তাঘাটের অনিয়মিত সংস্কার: ভাঙা রাস্তা পানি জমতে সাহায্য করে।
নদী-খাল দখল: প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
এগুলোই মিলিয়ে এখন অল্প বৃষ্টিতে পুরো শহর যেন এক বিশাল ‘পুকুরে’ পরিণত হয়।
২. অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য জলাবদ্ধতা কতটা ভয়ঙ্কর?
অ্যাম্বুলেন্স মানেই জীবন রক্ষার শেষ আশা। কিন্তু বৃষ্টির দিনে সেই অ্যাম্বুলেন্সই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বিপদে পড়া যানবাহন। যানজট: পানি জমে যান চলাচল বন্ধ, ফলে অ্যাম্বুলেন্সও আটকে যায়। ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি: পানি ঢুকে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাস্তার সংকট: জলাবদ্ধতায় অনেক রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। সময়ের গুরুত্ব: রোগীর জন্য প্রতিটি মিনিট মূল্যবান, অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে অ্যাম্বুলেন্স।
৩. রোগীদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি
বর্ষায় যখন অ্যাম্বুলেন্স আটকে যায়, তখন এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলো রোগী ও তার পরিবার।
হৃদরোগী: সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারলে বাঁচানো কঠিন।
প্রসবকালীন নারী: প্রসববেদনায় আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্স এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
দুর্ঘটনার শিকার: দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু বা স্থায়ী অঙ্গহানির ঝুঁকি বাড়ে।
অনেক সময় দেখা যায়, রোগীকে স্ট্রেচারে তুলে স্থানীয় মানুষ পানি ডিঙিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।
৪. বর্ষায় বাড়ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ
বৃষ্টি মানেই শুধু রাস্তা ডোবা নয়, বরং মশাবাহিত রোগেরও ভয়াবহ বিস্তার।
ডেঙ্গু: প্রতি বছর বর্ষায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অল্প পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার হয়।
ম্যালেরিয়া: সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশি হলেও জলাবদ্ধতা থাকলে শহরেও ঝুঁকি থাকে।
ডায়রিয়া ও জ্বর: দূষিত পানি খাওয়ার কারণে এসব রোগ ছড়ায় দ্রুত।
ফলে অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা আরও বেড়ে যায়, কিন্তু সেবার পথ বাধাগ্রস্ত হয় জলাবদ্ধতায়।
৫. অ্যাম্বুলেন্সকর্মীদের লড়াই
যখন রাস্তায় পানি, তখনও অ্যাম্বুলেন্সকর্মীরা হাল ছাড়েন না।
বিকল্প গলি বা সরু রাস্তা খোঁজেন।
স্থানীয়দের সাহায্যে গাড়ি ঠেলে এগিয়ে নেন।
কখনো কখনো রোগীকে রিকশা, নৌকা বা ট্রলারে তুলে হাসপাতালে পৌঁছে দেন।
তাদের মানবিকতার কারণে অনেক রোগী শেষ পর্যন্ত বেঁচে যান।
৬. বর্তমান প্রস্তুতি কতটা যথেষ্ট?
সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে হাজারো অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়।
ওয়াটার-প্রুফ বা উঁচু চাকার অ্যাম্বুলেন্স নেই।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল।
প্রযুক্তিনির্ভর রুট নির্ধারণ সীমিত।
জরুরি করিডোর নেই।
ফলে শহরের বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে সাময়িক সমাধানের মাধ্যমে।
৭. আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা: অন্যরা কীভাবে সমাধান করেছে?
জাপান: ভূমিকম্প ও বন্যাপ্রবণ হওয়ায় সেখানে ওয়াটার-রেসকিউ যান রাখা হয়।
সিঙ্গাপুর: স্মার্ট ড্রেনেজ সিস্টেম, যাতে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যায়।
থাইল্যান্ড: বন্যার সময় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশেও এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো সম্ভব।
৮. সম্ভাব্য সমাধান
ড্রেনেজ সিস্টেম সংস্কার: খাল-নালা দখলমুক্ত করা।
ওয়াটার-রেসকিউ অ্যাম্বুলেন্স: নৌকা বা ভাসমান যান সংযোজন।স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম: জরুরি লেনে কেবল অ্যাম্বুলেন্স চলবে।
অ্যাপ ও কল সেন্টার: রোগীর কাছাকাছি অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত খুঁজে দেওয়া।
সচেতনতা বৃদ্ধি: ঘরোয়া পর্যায়ে মশা দমন ও পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ।
৯. নাগরিক সচেতনতা: আমাদের ভূমিকা
ড্রেনে আবর্জনা না ফেলা।
রাস্তা ফাঁকা রাখা অ্যাম্বুলেন্সের জন্য।
নিজের বাসার চারপাশে জমে থাকা পানি সরানো।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় উদ্যোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
উপসংহার
বাংলাদেশের নগরজীবনে অল্প বৃষ্টিই যেন এক অজানা আতঙ্ক। জলাবদ্ধ রাস্তায় যখন সাধারণ জীবন থমকে দাঁড়ায়, তখন জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে থাকা মানুষদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সই হয়ে ওঠে শেষ আশ্রয়। কিন্তু এ সেবা কার্যকর রাখতে হলে দরকার সুপরিকল্পিত নগরায়ণ, প্রযুক্তিনির্ভর অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা এবং নাগরিক সচেতনতা।
প্রতিটি জীবন মূল্যবান। তাই জলাবদ্ধতার শহরেও অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাক প্রতিটি রোগীর দোরগোড়ায়—that’s the real challenge and the real responsibility.
No Data Found!
21 Sep, 2025
20 Sep, 2025
20 Sep, 2025